মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত ও মারেফতের আলোচনা -মারেফতের বাণী / ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল-সুরেশ্বরী


এইবার আমরা এমন একজন অলীর লেখা কেবলা, কাবা এবং হজের আসল রহস্যের বর্ণনার অনুবাদ করবো যাঁর কথা শুনলে জাতিধর্ম নির্বিশেষে সবাই মাথা নত করে মেনে নেবেন এবং মানতে অবশ্যই বাধ্য হতে হবে। কারণ এমন অলীর কথা তারাই মানতে চাইবে না, যারা মানুষের আকৃতিতে পশুরূপে মানবসমাজে বাস করছে। অবশ্য মানুষের সুরতে যারা পশু তাদেরও প্রয়োজন আছে এবং তারা আছে বলেই তো মারেফতের গোপন কথা লেখার এত আয়োজন । সুতরাং এই লেখার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিজেকে ভুলেও মানুষের সুরতে পশু প্রমাণ করতে যাবেন না। যদি এমন কাজ করেন ফেলেন তা হলেও আপনাকে সম্মান দেখানো হবে। সেই সম্মানটির নাম হবে ‘ফার্স্ট ক্লাস জোকার।' খেলার মাঠে দু'একজন ড্রেস অ্যাজ ইউ লাইক মার্কা জোকার না থাকলে মাঠের মধ্যে হাসাহাসিটা তেমন জমে উঠে না। সেই বিখ্যাত অলীর লেখায় অনুবাদ করবো যাঁর নাম খাজা হাবিবুলাহ মাতা ফি হুব্‌বুল্‌লা সুলতানুল হিন্দ আতায়ে রসুল খাজা গরিবে নেওয়াজ ইয়া সৈয়দ মাওলানা মঈনুদ্দীন হাসান চিশতী সান্‌জারি আল হোসাইনি আল হাসানি। যার মাজার শরিফের এতই ওজন যে, একটিও নামে মুসলমান যদি না যায় তাতে কিছুই আসবে যাবে না। কারণ, কোটি কোটি হিন্দুরা কী রকম ভক্তি সহকারে মাজারে আসে তা যারা নিজের চোখে একবার দেখেছে তারাই আমার কথার সত্যতা স্বীকার করে নেবে। চোখে না দেখলে খাজার মাজারের ওজন দূর হতে করা মোটেই সম্ভব নয়। এই সেই খাজা বাবা, যাঁর উসিলাতে আজ ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের বুকে প্রায় ত্রিশ কোটি মুসলমানের অস্তিত্ব অবলোকন করি। এই সেই খাজা, যাঁর কাছে বড় বড় হিন্দু সাধকেরা মাথা নত করে নিজের ধর্ম ফেলে দিয়ে মুসলমান হয়েছেন। সাধক রাম সাধু, রাজীব সাধু, ত্রৈলোক্য সাধু এবং জয়পাল সাধুর মত হাজার হাজার সাধকেরা নিজেদের ধর্ম ফেলে দিয়ে মুসলমান হয়েছেন। কথায় বলে মানুষ তার দেশত্যাগ করতে পারে হাসিমুখে, কিন্তু নিজের ধর্ম পারে না ত্যাগ করতে। তার কিছুটা নমুনা দেখার ভাগ্য কি আপনার আমার হয় নি? কত বড় আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী হলে লক্ষ লক্ষ হিন্দুরা খাজা বাবার কাছে গিয়ে মুসলমান হয়েছেন। আর আমার মত আরবি ভাষা জানা মোল্লা অথবা পণ্ডিত যদি হিন্দুপট্টিতে সাতদিন সাতরাত ওয়াজ নসিহত করি তাহলেও একটি হিন্দুর পক্ষে মুসলমান হবার প্রশ্নটি না হয় বাদই দিলাম, এমনকি সেই ওয়াজ নসিহত কেউ শুনবে কি? আপনার বিবেককে প্রশ্ন করে দেখুন তো? ‘প্রত্যেক মানুষের সঙ্গে একটি করে শয়তান দেওয়া হয়েছে', সুতরাং সেই শয়তানটি যদি আপনার বিবেকের সিংহাসনে বহাল তরিয়তে বসে থাকে তবে গোঁজামিলের একখানা উত্তর হয়তো পাওয়া যেতে পারে। কারণ হিসাবে বলতে চাই যে, যদিও অধম লেখক রাজনীতি করা তো দুরে থাক এর ধারে কাছেও নেই তবু বলতে হচ্ছে যে, কিছুদিন আগে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট খাজা বাবার মাজারে মাত্র দশ হাজার মার্কিন ডলার দান করেছিলেন বলে কিছুসংখ্যক মানুষের সুরতে পশুরা এর প্রতিবাদ করতে সামান্য লজ্জা বোধ করেনি। এই সামান্য টাকার প্রশ্নে নামে-মুসলমান হয়ে যদি প্রতিবাদ করতে পারে তাহলে হিন্দুস্তানের বড় বড় হিন্দু ধনীরা যে লাখ লাখ টাকা প্রতিবছর খরচ করছে সেটা একবার দেখে আসুন না। অবশ্য আপনারা দেখতে যাবেন না। কারণ, প্রত্যেক মানুষের সঙ্গে যে একজন শয়তান দিয়ে দেওয়া হয়েছে, মহানবীর সেই বাণীর সার্থকতা তাহলে থাকে কোথায়? মকতুবাতে খাজা নামক বইটিতে খাজা বাবা কেবলা কাবা এবং হজের আসল রূপটি কী তা চিঠির ভাষায় বর্ণনা করছেন। কারণ তিনি তাঁর প্রধান মুরিদ বাবা কুতুব উদ্দিন বখতিয়ার কাকীকে যে কয়টি চিঠি লিখে পাঠিয়েছিলেন সেই চিঠিগুলোর একত্র সমাবেশের নামই হল মকতুবাতে খাজা। আগেই বলে রাখি যে, তাঁর চিঠির মান এতই উনড়বত যে অধম লেখকের মাথা গুলিয়ে যায়। কারণ, তিনি যে হাদিসের কথা বর্ণনা করেছেন, সেই হাদিসের দলিল কোথাও পাওয়া যাবে না এবং যেতে পারে না। কারণ, তিনি নিজেই সেই কথা বলতে গিয়ে তাঁর প্রধান মুরিদ বাবা কুতুব উদ্দিন বখতিয়ার কাকীকে বলেছেন যে, তিনি চরম রহস্যময় রাজ্যের পর্দা উঠিয়ে দেখতে পেলেন যে, মহানবী হজরত উমর ফারুককে উপদেশ দিচ্ছেন এই বলে যে, ‘হে উমর, অবশ্যই ইহা জেনে রাখ যে, মানুষের হৃদয়ই হল খানায়ে কাবা। মানুষের হৃদয় যেমন খানায়ে কাবা তেমনি মোমিনের হৃদয় হল আল্লাহ্‌র আর্শ তথা বসবাসের স্থান, যাকে সিংহাসন বলা হয়। সুতরাং এই হৃদয় তথা দিল-কাবার হজ করা প্রয়োজন।' হজরত উমর (রা.) জানতে চাইলেন, ‘হে আল্লাহ্‌র রসুল, দিল-কাবার হজ কেমন করে করতে হবে?' মহানবী বললেন, ‘মানুষের অস্তিত্ব চারটি দরজার মত : আব, আতশ, খাক ও বাদ অর্থা পানি, আগুন, মাটি এবং বাতাস। এই চারটি দরজা হতে সমস্ত সন্দেহ, অহঙ্কার এবং বহু ইলার পর্দাকে সরিয়ে দিতে পারলে দিলের আয়নায় তথা হৃদয়ের মুকুরে আল্লাহ্‌র খাস জালুয়া তথা নূর প্রত্যক্ষ দেখতে পাবে। খানায়ে কাবার আসল হজ পালন করা ইহাই। এই আসল হজটি তখনই হয়, যখন মানুষ তার নিজের আমিত্ব তথা স্বকীয়তা এমনভাবে মিটিয়ে ফেলবে যে আমিত্ব তথা স্বকীয়তার নাম গন্ধটুকু পর্যন্ত আর অবশিষ্ট থাকবে না। এমনকি তার বাহির এবং ভেতর এক রকম পবিত্র হবে এবং দিল তথা হৃদয় আল্লাহ্‌র নূরে নূরময় হয়ে যাবে।' হজরত উমর (রা.) মহানবীকে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ‘নিজের আমিত্ব তথা নিজের স্বকীয়তাকে কেমন করে নিস্ত তথা নাই করে দিতে হবে?' মহানবী বললেন, ‘মাহ্‌বুবের তথা আল্লাহ্‌র আশেক তথা প্রেমিক হতে পারলে নিজের আমিত্বকে তথা নিজের স্বকীয়তাকে ফানা করা তথা বিলীন করা সম্ভবপর হয়। যিনি মাহ্‌বুবের প্রেমিক হয়েছেন, তিনি ফানাফিলা তথা নির্বান লাভ করতে পেরেছেন এবং তিনি তখন মাহবুবের খাস জাতের মোজহার তথা প্রকাশকরূপে পরিগণিত হয়েছেন।' আবার হজরত উমর (রা.) মহানবীকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘দিলকে তথা হৃদয়কে খানায়ে খোদা তথা আল্লাহ্‌র ঘর এবং আরশে এলাহি কেন বলা হয়েছে? মহানবী বললেন, কোরানে আল্লাহ্‌ বলেছেন, “তিনি তোমাদের ভেতরই আছেন, কিন্তু তোমরা তাকে দেখছো না।” হে উমর, থাকবার জায়গাটিকেই ঘর বলা হয় এবং যেহেতু আল্লাহ্‌ দিলে তথা হৃদয়ে অবস্থান করেন সেই হেতু দিলকে খোদা তথা আল্লাহ্‌র ঘর বা আরশাল্লাহ্‌ আখ্যা দেওয়া হয়।' হজরত উমর (রা.) পুনরায় মহানবীকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এই মাটির তৈরি দেহের ভেতরকে কথা বলে? কে কান দিয়ে শুনছে? কে চোখ দিয়ে দেখছে? এবং কে সে যে সব কিছ ু অবগত হয়? আর সে-ই বা কে বা তার রূপই বা কেমন?' মহানবী বললেন, ‘এই মাটির তৈরি দেহে আর কেহ নয়, একমাত্র আল্লাহ্‌ই কথা বলেন, আল্লাহ্‌ই শ্রবণ করেন, আল্লাহ্‌ই দেখেন এবং সকল বিষয়ের উপর তিনিই জ্ঞানদানকারী তথা জ্ঞানদাতা।' হজরত উমর আবার প্রশ্ন করলেন, ‘এ রকম খাস জাতের মোজহার কি স্বয়ং মহানবী নন?' মহানবী বললেন, ‘আমি মিম ব্যতীত আহ্‌মদ।' মহানবীকে পুনরায় হজরত উমর (রা.) প্রশ্ন করলেন, ‘দিল কাবার হজ কে করতে পারে?' মহানবী বললেন, ‘দিল কাবার হজ একমাত্র তিনিই করতে পারেন যিনি আল্লাহ্‌র জাতের মধ্যে ডুবে গেছেন।' অর্থা যখন সাধক নিজের আমিত্বের তথা স্বকীয়তার দেয়াল সরিয়ে দিতে পারে এবং সাধক ও আল্লাহ্‌র মাঝখানে আর কোনো প্রকার দেয়াল না থাকে কেবল তখনই সে আল্লাহ্‌র গুণে গুণান্বিত হয়ে যায় এবং তার দিল তথা হৃদয় আল্লাহ্‌র খাস নূরে নূরময় হয়ে যায়। সাধকের দিলে তথা হৃদয়ে আল্লাহ্‌র জাত নূরের বিকাশ ও প্রকাশ হওয়াই দিল কাবার হজ এবং ইহাই আসল হজ তথা প্রকৃত হজ। মহানবীকে হজরতউমর (রা.) প্রশ্ন করলেন, ‘যখন সব কিছুই এক পবিত্র জাতের প্রকাশ ও বিকাশ, তাহলে এই পথ বা রাস্তা দেখানো কার জন্য এবং কেন?' মহানবী বললেন, ‘তিনি নিজেই পথ এবং প্রদর্শনকারীও তিনিই।' মহানবীকে আবার হজরত উমর (রা.) প্রশ্ন করলেন, ‘তবে এই দুনিয়াতে এত নানান রকম রং ও রূপের এবং গুণ ও গরিমার প্রকাশ কেন?' মহানবী বললেন, ‘পথ যিনি দেখান তাকে একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে তুলনা করা চলে। ব্যবসায়ীর কাছে যিনি যে জিনিসটি কিনতে চাইবেন ব্যবসায়ী ঠিক সেই জিনিসটিই তাকে দেবেন। গম যিনি কিনতে আসবেন তাকে ব্যবসায়ী ঠিক সেই জিনিসটিই দেবেন। এর প্রধান কারণ হল এই যে, যিনি গম কিনতে আসবেন তাকে যব এবং যিনি যব কিনতে আসবেন তাকে গম কখনোই কোনো ব্যবসায়ী দেবেন না। ‘হে উমর, নবীদের তুলনা অনেকটা ডাক্তারদের মত। ডাক্তারেরা যেমন রুগী এবং রোগের পরিচয় জানবার পর ঔষধ দেবার ব্যবস্থা করেন এবং তাতেই রুগী রোগমুক্ত হয়, সে রকম নবীরা মানুষের আত্মার রোগের পরিচয় জানবার পর মারেফতি ঔষধ প্রদান করেন, যার অশেষ কৃপায় মানব আত্মার রোগগুলো হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্তি পেয়ে আল্লাহ্‌র রহস্য হতে পারে। ‘হে উমর, ধর্মপথের যাত্রীদেরকে মোটামুটি চারটি বিভিন ড়ব দলে ভাগ করা যায়। জ্ঞান ও গুণের প্রশ্নে এই চারটি দলের মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য পাওয়া যায়। প্রথম দলটির নাম হল দলে ভর্তি হওয়া মুসলমান যাকে আম মুসলমান বলা হয়। এই দলে ভর্তি হওয়া নামের মুসলমানদেরকে জাহের পোরস্ত তথা প্রকাশ্য ইবাদতকারী বলা হয় এবং এরাই শরিয়তের প্রথম সিঁড়িতে অবস্থান করে। এই সিঁড়িতে অবস্থান করে যদি তারা মৃত্যুর নিকটবর্তী হয় এবং এই সিঁড়ি অতিক্রম করতে যদি চেষ্টা না করে তাহলে তারা ধর্মের আসল উদ্দেশ্য হতে বঞ্চিত হবে। দ্বিতীয় দলটির নাম হলো আওয়ামুল খাস। এই দলটির বিশেষত্ব হল যে, এরা একদিকে যেমন সাধারণ আবার অন্যদিকে কিছুটা অসাধারণের গন্ধ পাওয়া যায়। এই দলটি রহস্যলোকের জ্ঞানের প্রতি কিছুটা আকৃষ্ট বটে, কিন্তু নিজেকে কেমন করে চিনতে হবে সেই জ্ঞান হতে বঞ্চিত তথা রমুজে রূহানিয়াত বিষয়টিতে অজ্ঞ। এরাই আহলে তরিকত বলে পরিচিত তথা পরিচয়ের পথে অবস্থান করে। তৃতীয় দলে যারা আছে তারা হলো খাস তথা আসল। এরা কেবল একমাত্র দ্বীনের মধ্যে বাস করে এবং এরা নিজেদের আপন পরিচয় জানতে পেরেছে। এদেরকেই বলা হয় আহ্‌লে হাকিকত তথা সত্যের রাজ্যে বাস করছে। চতুর্থ দলে যারা আছে তাদেরকে বলা হয় খাস্‌ল খাস তথা আসলেরও আসল। এরা সব সময় আল্লাহ্‌র রহস্যে ডুবে থাকে এবং আল্লাহ্‌র পবিত্র জাতের গুণাবলির বিকশিত প্রত্যক্ষ রূপ হলো এরা এবং সব সময় সব রকম অবস্থায় যা দর্শনীয় তসমুদয় দর্শন করে। যে কোন ধরনের কলুষতা, অহংকার এবং আমিত্বের দেয়াল এরা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। দুধের ভেতর চিনি মিশালে যেমন চিনির আলাদা পরিচয় জানার আর অবকাশ থাকে না, তেমনি এরা আল্লাহ্‌র জাতের ভেতর ডুবে গিয়ে নিজের আমিত্বকে ফানা করে তথা নির্বাণ করে দিয়ে বাকাবিলাহ্‌তে তথা চিরস্থায়িত্বের মধ্যে অবস্থান করে। এ রকম বাকাবিল্লাহ্‌র লোকেরাই আহ্‌লে মারেফত তথা মারেফতের মধ্যে বাস করে। ‘হে উমর, হেদায়েত তথা দীক্ষা দেওয়া এবং রাহ্‌নামায়ী তথা পথ প্রদর্শন তালেবের তথা পথসন্ধানীর যোগ্যতা বিচার করা হয়। আসরারে এলাহি তথা আল্লাহ্‌র গুপ্ত রহস্যের মহান নিয়ামত সাধারণ মানুষকে দান করা যায় না। সাধারণ মানুষকে এ রকম নিয়ামতে উজমা দান করলে ইহার অবমূল্যায়ন এবং অপব্যবহার হবার সম্ভাবনা তাকে। কারণ, সাধারণ মানুষ এই বিরাট নিয়ামতের গুরুদায়িত্ব বহন করতে পারবে না এবং অবশেষে রাহে গোমরাহীতে তথা ভুল পথে এগিয়ে যাবে।' হজরত উমর (রা.) আবার মহানবীকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আল্লাহ্‌র জাত কী এবং আর সমস্ত বস্তুই বা কী? মহানবী বললেন, ‘সমস্ত বস্তুই আল্লাহ্‌র মোজহাব তথা প্রকাশস্থল, যদিও প্রকাশের ধারাতে অনেক রকম কিন্তু হাকিকতে তথা আসলে সমস্ত কিছুই এক। কিন্তু মানুষকে সমস্ত সৃষ্টির উপর কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা আল্লাহ্‌ দান করেছেন। কারণ, মানুষকেই আল্লাহ্‌র নিজের সুরতে তথা চেহারায় তৈরি করেছেন। ‘হে উমর, ইসলামের প্রধান উদ্দেশ্য হল মোমিনরূপে পরিগণিত হওয়া। ইহার আসল পরিচয় সম্বন্ধে বিস্তারিত ব্যাখ্যা তোমাকে জানালাম। বর্তমান অবস্থায় তোমার পক্ষে ইহাই যথেষ্ট। যখন তুমি এর চেয়ে আরো বেশি অগ্রসর হবে এবং কামালিয়াতের তথা সিদ্ধির শেষ পর্যায়ে উপনীত হবে তখন কেবল তোমার ভেতরই তোমার সব রকম গুণাবলি এবং গোপন রহস্যের যাবতীয় প্রকাশ ও বিকাশ তোমার ভেতরই মওজুদ দেখতে পাবে।' তারপর মহানবী এই শেষ উপদেশটি দিলেন যে, যে নিজেকে চিনতে পেরেছে সে তার রবকে চিনতে পেরেছে। বাবা কুতুব উদ্দিন, এই সকল আদেশ-উপদেশ যা মহানবী হজরত উমর (রা.)-কে দিয়েছেন তা আজ পর্যন্ত রহস্যলোকের পর্দার ভেতর ছিল তথা রাজে মখফীর পুশিদাতে ছিল। আমি রহস্যলোকের আদেশ পাবার পরই তোমাকে লিখে দিলাম। জাহেরি মোল্লা ও পণ্ডিতদের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ করতে যেও না। কারণ আল্লাহ্‌র বিনা হুকুমে কোনো কিছু নড়াচড়া করতে পারে না। বাদ আস্‌সালাম। মহানবীর আদর্শের বাণী না বলে যদি খাজা বাবা তাঁর নিজের বাণী বলে প্রচার করতেন এবং যদি তিনিই সর্বেসর্বা এবং আর কিছু নেই বলে ঘোষণা করতেন তাহলে পাক-ভারতের ত্রিশকোটি মুসলমান খাজা বাবা ছাড়া আর কিছু কি গ্রহণ করতেন? তাহলে কি খাজা বাবার ধর্ম বলে একটি আলাদা ধর্মপাক-ভারতে বিরাজিত থাকতো? তাহলে কি তাঁর বানানো ত্রিশকোটি মুসলমান আজ অন্য কোনো ধর্ম মানতে চাইতো? কত বড় সাংঘাতিক ওজন খাজা বাবার। ভারতেও অবাক লাগে। বিস্ময়ে হতে হয় অভিভূত। জাতি-ধর্মনির্বিশেষে লাখো লাখো মানুষের আগমন হয় যাঁর পবিত্র রওজা মোবারকে। অবাক হতে হয় যেই কথাটা মনে করে সেই কথাটি হল, যদি একটিও মুসলমান খাজা বাবার মাজারে না যায় তাতে তাঁর রওনক ও শান একবিন্দুও কমে যাবে না। কারণ, লাখো লাখো অন্য ধর্মের মানুষেরা যেভাবে তাঁর মাজারে সমবেত হন তা একবার চোখে দেখলেই এই কথার সত্যতা বুঝতে পারবেন।

-মারেফতের বাণী
চেরাগে জান শরীফ ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল-সুরেশ্বরী

৪টি মন্তব্য:

  1. অসাধারণ আর বিস্ময়কর পোষ্ট। চমকিত হতে হয়েছে পড়তে পড়তে।

    উত্তরমুছুন
  2. Hazrat Nizammuddin Auliya" | Dargah Nizamuddin Auliya India
    https://youtu.be/XmAB4DfsECk

    উত্তরমুছুন
  3. পশ্চিম বাংলার কোন কামিল পীরের সন্ধান বলে দিন দয়া করে। যাজাকআল্লাহ

    উত্তরমুছুন