মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

আল্লাহ্‌র হক ও বান্দার হক -নিহ্নবে চিত্তদাহ : সুফিবাদ সার্বজনীন / ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল-সুরেশ্বরী


আমরা কিন্তু একটি মূল্যবান আদর্শের কথাটি জেনেশুনে ভুলে যাই, আর সেই কথাটি হলো : এবাদতকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে, একটি আল্লাহ্‌র হক এবং অপরটি বান্দার হক। খুব ছোট করে এই বিষয়টির ওপর আলোচনা করতে চাই এই জন্যই যে ইহার বিস্তারিত ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণ, দলিল-প্রমাণ দেওয়া হয়েছে আমার রচিত মারেফতের গোপন কথা নামক বইতে। আল্লাহ্‌র হক আদায় না করলে বান্দা আল্লাহ্‌র কাছে অপরাধী হয় এবং সেই অপরাধ মাফ করে দেবার একমাত্র ক্ষমতাটি আল্লাহ্‌রই উপর। আল্লাহ্‌র হক কী কী ইহা আর বলে দিতে হয় না এবং বলার প্রয়োজনও মনে করি না। কারণ এটা কমবেশি সবারই জানা থাকার কথা। বান্দার হক যদি আদায় করা না হয় তা হলে যাকে হক হতে বঞ্চিত করা হয়েছে সে যদি মাফ না করে তা হলে আল্লাহ মাফ করার বিধানটি রাখেন নি। সুতরাং বান্দার হকটি খুবই মারাত্মক বিষয়, ভয়ঙ্কর ব্যাপার এবং বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়।
কোরান বলছে : তুমি কি সেই মানুষটিকে দেখেছ যে ইসলামের উপর মিথ্যা চাপিয়ে দেয় অথবা মিথ্যা আরোপ করে? সেই মানুষটি, যে এতিম হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এতিম হতে মুখ ফিরিয়ে নিলেই যদি ইসলাম হতে প্রথমেই বাদ পড়ে যায়, তা হলে এতিমের আমানত খেয়ানত এবং এতিমের হক মেরে দিলে কী রকম ভয়ঙ্কর অবস্থাটি দাঁড়ায়? বুকে হাত রেখে নিজের বিবেককে বার বার প্রশ্ন করে দেখুন তো? এই অপ্রিয় সত্য কথাটি সব ফেরকার আলেম-উলামারা একবাক্যে স্বীকার করে। আল্লাহ বলেছেন যে, তোমরা যতই চালাকি করো না কেন আমার চেয়ে বড় চালাক নও। (হুবহু উদ্ধৃত নয়)। কেন এই কথাটি তুলে ধরলাম? মানুষ নিজের স্বার্থের প্রশ্নে ফাঁকিবাজ। ফাঁকিবাজিটা তখনই উঁকি-ঝুঁকি মারে যখন স্বার্থের উপরে আঘাত আসে। বান্দা চালাক, তাই মনে করে আল্লাহ্‌র এবাদত-বন্দেগি পালন করলেই বেহেস্তে যেতে পারবে। কিন্তু এতিমদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে, এতিমদের আমানত খেয়ানত করলে, এতিমদের আর্থিক সম্পত্তি মেরে দিলে বেহেস্তে যাবার প্রশ্নই উঠতে পারে না। হ্যাঁ, তখনই বেহেস্তে যেতে পারবে যখন এতিমেরা তাদের হক মেরে দেবার পরও জেনে শুনে ক্ষমা করে দেবে। বান্দার হক আল্লাহ মাফ করে দেবার বিধানটি আল্লাহ নিজেই রাখেন নি। এই বান্দাদের অর্থনৈতিক কষ্ট দেওয়া, দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত করা যাদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে তারা যতই আল্লাহ্‌র এবাদত-বন্দেগি করুক না কেন, বেহেস্তে যাবার প্রশ্নটিই উঠে না। এইখানেই এবং এই বিষয়েই বেশির ভাগ বান্দা মার খাবে এবং আল্লাহ্‌র দরবারে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এ জন্যই বলা হয়ে থাকে যে অধিকাংশ মানুষেরই জাহানড়বামে যাবার বেশি সম্ভাবনা আছে। এই বান্দার হক নিয়েই অনেক বান্দার আল্লাহ্‌র দরবারে বিচারের মুখোমুখি হয়ে জাহান্নামে যেতে হবে। যদি কোনো দেশের সরকার বেকারদের বেকার-ভাতা দেবার ব্যবস্থা করে, বাসস্থানের ব্যবস্থা করে, চিকিসার ব্যবস্থা করে এবং সন্তানদের দায় দায়িত্ব গ্রহণ করে তা হলে সেই দেশে কমিউনিজম প্রবেশ করতে পারবে না। অথচ এই বান্দাদের হক আদায়ের বিষয়টিতে আমরা খুব বেশি একটা গুরুত্ব দেই না, যতটুক গুরুত্ব দেই নামাজ-রোজার উপরে। মুয়াবিয়া কী করলো, উমাইয়াদের শাসনব্যবস্থা কেমনটি ছিলো এবং আব্বাসীয় আমলের শাসন ব্যবস্থাটি কেমন ছিলো এই বিষয়গুলো এইখানে তুলে ধরবার প্রয়োজন মনে করি না। এই আধুনিক যুগে তথা এই একবিংশ যুগে এক মালয়শিয়া বাদে ছাপ্পান্নটি মুসলিম দেশের অবস্থাগুলো কেমন তা আর বলে দিতে হয় না। বুঝলে বুঝলেন, আর যদি না বোঝেন তো বলার কিছু নাই। ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস আমাদের যেমন ইতিহাস লিখতে এবং পড়তে শিখিয়েছেন, তেমনি বিশ্বব্যাংকের এককালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকনামারা কমিউনিজমকে ঠেকাবার ট্যাবলেট-ক্যাপসুল নামে পরিচিত এনজিও-র মাধ্যমে মানবসেবা করার প্রতিষ্ঠানগুলোর জনক।

-নিহ্নবে চিত্তদাহ : সুফিবাদ সার্বজনীন
চেরাগে জান শরীফ ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল-সুরেশ্বরী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন