মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

মসনবী শরীফ / Masnavi Sharif

মসনবী শরীফ
(প্রথম খণ্ড) 
মূল: মাওলানা জালালউদ্দীন রুমী (র.আ.) 
উচ্চারণসহ বাংলায় শাব্দিক অনুবাদ: 
ডা. ময়েজ উদ্দিন রশিদ 
মূল্য : ২০০ টাকা 
সুফিবাদ প্রকাশনালয় 
প্রযত্নে: বে-ঈমান হোমিও হল 
১০৮ নিউ এলিফ্যান্ট রোড (২য় তলা), ঢাকা-১২০৫। 
পরিবেশক 
র‌্যামন পাবলিশার্স 
২৬ বাংলাবাজার, ঢাকা।

মসনবী শরীফ

(দ্বিতীয় খণ্ড
মূল: মাওলানা জালালউদ্দীন রুমী (র.আ.) 
উচ্চারণসহ বাংলায় শাব্দিক অনুবাদ: 
ডা. ময়েজ উদ্দিন রশিদ 
মূল্য : ২৬০ টাকা 
সুফিবাদ প্রকাশনালয় 
প্রযত্নে: বে-ঈমান হোমিও হল 
১০৮ নিউ এলিফ্যান্ট রোড (২য় তলা), ঢাকা-১২০৫। 
পরিবেশক 
র‌্যামন পাবলিশার্স 
২৬ বাংলাবাজার, ঢাকা।








দিওয়ান-ই-বু-আলী শাহ কলন্দর / Deewan-E-Bu-Ali-Shah Qalandar

দিওয়ান-ই-বু-আলী শাহ কলন্দর 
(প্রথম খণ্ড) 
বাংলায় অনুবাদ 
ডা. ময়েজ উদ্দিন রশিদ 
ইংরেজী অনুবাদ 
আবদুল্লাহ আল-হারুন ও মোঃ নুরুজ্জামান 
মূল্য : ১০০ টাকা 
করবী প্রকাশন 
২৬ বাংলাবাজার, ঢাকা। 
পরিবেশক 
র‌্যামন পাবলিশার্স 
২৬ বাংলাবাজার, ঢাকা। 
ISBN : 984-70740-0026-8 

দিওয়ান-ই-বু-আলী শাহ কলন্দর
(দ্বিতীয় খণ্ড) 
বাংলায় অনুবাদ 
ডা. ময়েজ উদ্দিন রশিদ 
ইংরেজী অনুবাদ 
ফয়জুল ইসলাম (লেলিন) 
মূল্য : ১০০ টাকা 
করবী প্রকাশন 
২৬ বাংলাবাজার, ঢাকা। 
পরিবেশক 
র‌্যামন পাবলিশার্স 
২৬ বাংলাবাজার, ঢাকা। 
ISBN : 984-70740-0012-5

দিওয়ান-ই-বু-আলী শাহ কলন্দর
(তৃতীয় খণ্ড)
বাংলায় অনুবাদ 
ডা. ময়েজ উদ্দিন রশিদ 
ইংরেজী অনুবাদ 
ফয়জুল ইসলাম (লেলিন) 
মূল্য : ২০০ টাকা 
করবী প্রকাশন 
২৬ বাংলাবাজার, ঢাকা। 
পরিবেশক 
র‌্যামন পাবলিশার্স 
২৬ বাংলাবাজার, ঢাকা।
ISBN : 984-70740-0035-1
  









আত্মদর্শনের পথে, বন্দী মানব মুক্তির পথে / Atto Dorsoner Pothe, Bondi Manob Muktir Pothe

আত্মদর্শনের পথে
ডা. ময়েজ উদ্দিন রশিদ
মূল্য : ১০০ টাকা
করবী প্রকাশন
২৬ বাংলাবাজার, ঢাকা।
পরিবেশক
র‌্যামন পাবলিশার্স
২৬ বাংলাবাজার, ঢাকা।
ISBN : 984-70740-0032-0



বন্দী মানব মুক্তির পথে 
ডা. ময়েজ উদ্দিন রশিদ 
মূল্য : ৪০ টাকা 
 পরিবেশক 
র‌্যামন পাবলিশার্স 
২৬ বাংলাবাজার, ঢাকা।

ডাউনলোড করুন ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল সুরেশ্বরীর ওয়াজের ভিডিও, অডিও / Download Dr.Baba Jahangir Ba-Eman-Al-Suressori's Waj (Audio, Videos)

ডাউনলোড করুন ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল সুরেশ্বরীর সবগুলো বই / Download Dr.Baba Jahangir Ba-Eman-Al-Suressori's Book

মারেফতের গোপন কথা
ডাউনলোড 



   

মারেফতের বানী

 ডাউনলোড 




সুফিবাদ আত্নপরিচয়ের একমাত্র পথ ১ম খণ্ড
ডাউনলোড





সুফিবাদ আত্নপরিচয়ের একমাত্র পথ ২য় খণ্ড
ডাউনলোড






সুফিবাদ আত্নপরিচয়ের একমাত্র পথ ৩য় খণ্ড 
ডাউনলোড 




সুফিবাদ আত্নপরিচয়ের একমাত্র পথ ৪র্থ খণ্ড
ডাউনলোড 





ইতিহাস নয় সুফিবাদের রহস্য
ডাউনলোড






নিহ্নবে চিত্তদাহ
সুফিবাদ সার্বজনীন

ডাউনলোড 





কোরানুল মাজিদ : হুবহু অনুবাদ ও কিছু ব্যাখ্যা (১ম খণ্ড)
ডাউনলোড  





  কোরানুল মাজিদ : হুবহু অনুবাদ ও কিছু ব্যাখ্যা (২য় খণ্ড)
ডাউনলোড  



কোরানুল মাজিদ : হুবহু অনুবাদ ও কিছু ব্যাখ্যা (৩য় খণ্ড)
কোরানুল মাজিদ : হুবহু অনুবাদ ও কিছু ব্যাখ্যা (৪র্থ খণ্ড)
Under Construction 




babajahangir.com, babajahangir, dr.jahangir, marefoter_gopon_kotha, marefoter gopon kotha, marefoter_bani, marefoter bani, sufibad_atto_porichoyer_ekmatro_poth, sufibad atto porichoyer ekmatro poth, sufibader_rohoshya, sufibader rohoshya, sufibad_sarbojonin, sufibad sarbojonin, quran, quranul majid


আল্লাহ্‌র হক ও বান্দার হক -নিহ্নবে চিত্তদাহ : সুফিবাদ সার্বজনীন / ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল-সুরেশ্বরী


আমরা কিন্তু একটি মূল্যবান আদর্শের কথাটি জেনেশুনে ভুলে যাই, আর সেই কথাটি হলো : এবাদতকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে, একটি আল্লাহ্‌র হক এবং অপরটি বান্দার হক। খুব ছোট করে এই বিষয়টির ওপর আলোচনা করতে চাই এই জন্যই যে ইহার বিস্তারিত ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণ, দলিল-প্রমাণ দেওয়া হয়েছে আমার রচিত মারেফতের গোপন কথা নামক বইতে। আল্লাহ্‌র হক আদায় না করলে বান্দা আল্লাহ্‌র কাছে অপরাধী হয় এবং সেই অপরাধ মাফ করে দেবার একমাত্র ক্ষমতাটি আল্লাহ্‌রই উপর। আল্লাহ্‌র হক কী কী ইহা আর বলে দিতে হয় না এবং বলার প্রয়োজনও মনে করি না। কারণ এটা কমবেশি সবারই জানা থাকার কথা। বান্দার হক যদি আদায় করা না হয় তা হলে যাকে হক হতে বঞ্চিত করা হয়েছে সে যদি মাফ না করে তা হলে আল্লাহ মাফ করার বিধানটি রাখেন নি। সুতরাং বান্দার হকটি খুবই মারাত্মক বিষয়, ভয়ঙ্কর ব্যাপার এবং বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়।
কোরান বলছে : তুমি কি সেই মানুষটিকে দেখেছ যে ইসলামের উপর মিথ্যা চাপিয়ে দেয় অথবা মিথ্যা আরোপ করে? সেই মানুষটি, যে এতিম হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এতিম হতে মুখ ফিরিয়ে নিলেই যদি ইসলাম হতে প্রথমেই বাদ পড়ে যায়, তা হলে এতিমের আমানত খেয়ানত এবং এতিমের হক মেরে দিলে কী রকম ভয়ঙ্কর অবস্থাটি দাঁড়ায়? বুকে হাত রেখে নিজের বিবেককে বার বার প্রশ্ন করে দেখুন তো? এই অপ্রিয় সত্য কথাটি সব ফেরকার আলেম-উলামারা একবাক্যে স্বীকার করে। আল্লাহ বলেছেন যে, তোমরা যতই চালাকি করো না কেন আমার চেয়ে বড় চালাক নও। (হুবহু উদ্ধৃত নয়)। কেন এই কথাটি তুলে ধরলাম? মানুষ নিজের স্বার্থের প্রশ্নে ফাঁকিবাজ। ফাঁকিবাজিটা তখনই উঁকি-ঝুঁকি মারে যখন স্বার্থের উপরে আঘাত আসে। বান্দা চালাক, তাই মনে করে আল্লাহ্‌র এবাদত-বন্দেগি পালন করলেই বেহেস্তে যেতে পারবে। কিন্তু এতিমদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে, এতিমদের আমানত খেয়ানত করলে, এতিমদের আর্থিক সম্পত্তি মেরে দিলে বেহেস্তে যাবার প্রশ্নই উঠতে পারে না। হ্যাঁ, তখনই বেহেস্তে যেতে পারবে যখন এতিমেরা তাদের হক মেরে দেবার পরও জেনে শুনে ক্ষমা করে দেবে। বান্দার হক আল্লাহ মাফ করে দেবার বিধানটি আল্লাহ নিজেই রাখেন নি। এই বান্দাদের অর্থনৈতিক কষ্ট দেওয়া, দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত করা যাদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে তারা যতই আল্লাহ্‌র এবাদত-বন্দেগি করুক না কেন, বেহেস্তে যাবার প্রশ্নটিই উঠে না। এইখানেই এবং এই বিষয়েই বেশির ভাগ বান্দা মার খাবে এবং আল্লাহ্‌র দরবারে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এ জন্যই বলা হয়ে থাকে যে অধিকাংশ মানুষেরই জাহানড়বামে যাবার বেশি সম্ভাবনা আছে। এই বান্দার হক নিয়েই অনেক বান্দার আল্লাহ্‌র দরবারে বিচারের মুখোমুখি হয়ে জাহান্নামে যেতে হবে। যদি কোনো দেশের সরকার বেকারদের বেকার-ভাতা দেবার ব্যবস্থা করে, বাসস্থানের ব্যবস্থা করে, চিকিসার ব্যবস্থা করে এবং সন্তানদের দায় দায়িত্ব গ্রহণ করে তা হলে সেই দেশে কমিউনিজম প্রবেশ করতে পারবে না। অথচ এই বান্দাদের হক আদায়ের বিষয়টিতে আমরা খুব বেশি একটা গুরুত্ব দেই না, যতটুক গুরুত্ব দেই নামাজ-রোজার উপরে। মুয়াবিয়া কী করলো, উমাইয়াদের শাসনব্যবস্থা কেমনটি ছিলো এবং আব্বাসীয় আমলের শাসন ব্যবস্থাটি কেমন ছিলো এই বিষয়গুলো এইখানে তুলে ধরবার প্রয়োজন মনে করি না। এই আধুনিক যুগে তথা এই একবিংশ যুগে এক মালয়শিয়া বাদে ছাপ্পান্নটি মুসলিম দেশের অবস্থাগুলো কেমন তা আর বলে দিতে হয় না। বুঝলে বুঝলেন, আর যদি না বোঝেন তো বলার কিছু নাই। ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস আমাদের যেমন ইতিহাস লিখতে এবং পড়তে শিখিয়েছেন, তেমনি বিশ্বব্যাংকের এককালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকনামারা কমিউনিজমকে ঠেকাবার ট্যাবলেট-ক্যাপসুল নামে পরিচিত এনজিও-র মাধ্যমে মানবসেবা করার প্রতিষ্ঠানগুলোর জনক।

-নিহ্নবে চিত্তদাহ : সুফিবাদ সার্বজনীন
চেরাগে জান শরীফ ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল-সুরেশ্বরী

নফস ও রূহ সম্পর্কে আলোচনা -মারেফতের বাণী / ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল-সুরেশ্বরী


এবার আমরা নফস তথা প্রাণের কথা না বলে রূহ তথা আত্মার কথাটির একটু আলোচনা করতে চাই। বাবা জান শরীফ এই আত্মাকেই তাঁর পুঁথির ভাষায় বলেছেন প্রাণের প্রাণ। তা যে নামেই ডাকা হোক না কেন : আব, পানি, জল আর ওয়াটার আসলে একই পদার্থের অনেক নাম।
কোরান বলছে, ‘কুলুর রূহু মিন আম্‌রি রাব্বি' অর্থা ‘আত্মা আমার রবেরই আদেশ হতে আগত।' অথচ কোরান এই কথাটি কখনোই বলে নি যে ‘কুলুন নফস মিন আম্‌রি রাব্বি' অর্থা ‘নফস তথা প্রাণ আমার রবেরই আদেশ হতে আগত।' তাহলে আত্মা কী? আত্মার মধ্যে রবেরই (আল্লাহ্‌ শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি) আদেশ এবং কর্ম বিদ্যমান। নফসের গুণাগুণ কিছুই আত্মার মধ্যে নেই। এই জন্যই আত্মাকে চিনতে এবং বুঝতে পারে না নফস। এমনকি নফস আত্মার ধারণা করতেও পারে না। তাই আত্মা কেবল আত্মাকেই বুঝতে এবং জানতে পারে। ভাষার মাধ্যমে আত্মার পরিচয় দেওয়া যায় না। ভাষার মাধ্যমে রবরূপী আল্লাহ্‌কে যেমন বুঝানো যায় না তেমনি আত্মাকে বুঝানো যায় না। কোরানের বত্রিশ নম্বর সূরা সিজ্‌দাহ্‌-এর নয় আয়াতে বলা হয়েছে, ‘সুম্মা সাওঅয়াহু ওয়ানাফাকা ফিহি মির্‌রূহিহি' অর্থা ‘পরে পরিপূর্ণ আকৃতি দেন এবং তাঁর (আল্লাহ্‌র) আত্মা তার (মানুষের) মাঝে ফুকার করেন।' এখানেও লক্ষ করার বিষয় হল যে, আল্লাহ্‌ নফস ফুকার না করে আত্মাকে ফুকার করলেন। এই আয়াতটির কথা প্রথমেই বলা হল কারণ এখানেই প্রায় সবাই আত্মাকে নফস বলে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ভুল করে বসেন। আত্মার বিষয়ে যতবার কোরানে বলা হয়েছে তার মধ্যে এটাই একমাত্র বিশেষ ঘোষণা, যার মাধ্যমে মনে হতে পারে যে, সকল মানুষের মধ্যেই আত্মাকে ফুকার করে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ্‌ যেহেতু এখানে অকর্তা এবং নির্বিকার সেই হেতু প্রত্যেক মানুষের মধ্যে যে আত্মা আছে সেটা সে বুঝতে পারে না। নিজের মধ্যে নিজের পর্দাটি সরাবার সাধনা এবং রবের রহমত লাভ করতে পারলেই আত্মার পরিপূর্ণ রূপটি নফসের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এবং এই আত্মা প্রতিষ্ঠিত নফসের নামই হল মুমিন। ‘প্রকৃত মুমিন' কথাটি ভুল। কারণ মুমিন মানেই হল আত্মার প্রকৃত প্রতিষ্ঠা লাভ করা। এই আত্মাকে জানাবার কেবল প্রবল ইচ্ছা ও সাধনার দ্বারা তা হয় না, আল্লাহ্‌র একান- ইচ্ছার উপরই নির্ভর করে। আবার যদি বলা হয় যে নফস আত্মাকে চিনতে পারে না, তাহলেও কথাটিতে ভুল থেকে যায়। কারণ, নফসকে চিনতে পারলেই রবরূপী আল্লাহ্‌কে চেনা হয়ে যায়। সুতরাং নফস আত্মাকে চিনতে পারে না বললে ভুল বলা হয় এবং সেই ভুলটি জেনে শুনেই বলা হয়েছে। কারণ, নফস হল আত্মার বাহন অথবা বসার আসন। নফসটিকে এমন একটি উন্নত স্তরে আসতে হবে, যে স্তরে আসামাত্রই আত্মার বাহন বা আসনে পরিণত হয়ে যাবে। সেই উন্নত স্তর অথবা ধাপটিকে এখন যত প্রকার নামই দেওয়া হোক না কেন তাতে কিছু আসে যায় না। কারণ, নামটি এখানে মোটেই মুখ্য নয়। উন্নতির পরিবেশ রচনা করাটাই মুখ্য। অবশ্য এই সামান্য নাম নিয়েও কম মতভেদের সৃষ্টি হয়নি এবং এটা এক ধরনের অজ্ঞতা অথবা গোঁড়ামি বলা যেতে পারে। মান আরাফা রূহু বলা হয়নি, বরং বলা হয়েছে মান আরাফা নাফসাহু, অর্থা যে তার নফসকে চিনতে পেরেছে। কিন্তু একথা বলা হয়নি যে, যে তার রূহকে চিনতে পেরেছে। অতএব নফস যখন আপনার মধ্যে পরিচয় দান করে সেই পরিচয়টুকুই হল রবরূপী আল্লাহ্‌র পরিচয়। সুতরাং নফস তথা প্রাণই রূহ তথা প্রাণের প্রাণকে চিনিয়ে দেবার আইন আছে বলে স্পষ্ট ঘোষণা করা হয়েছে। যে প্রাণ তার নিজের ভেতর লুকানো প্রাণের প্রাণকে চিনতে পেরেছে সেই প্রাণটি কি পরিশুদ্ধ এবং পরিতৃপ্ত নয়? অবশ্যই সেই নফস তথা প্রাণটি পরিশুদ্ধ এবং পরিতৃপ্ত বলে কোরান ঘোষণা করেছে এবং এই ধরনের প্রাণকে জানড়বাতে প্রবেশ লাভ করার আদেশ দেওয়া হয়। আর জানড়বাতে প্রবেশ লাভ করার অর্থই হল স্বাধীনতা লাভ করা। এই স্বাধীনতার রূপ এবং শক্তি বিজ্ঞানময় এবং রহস্যের এক একটি প্রতিমূতির্  এবং এরাই হাদি, সাদেক, হানিফ, কামেল এবং মুরশিদ। আল্লাহ্‌র বিকশিত অনন্ত ছুটে চলার বিকাশময় রূপের যেখানে ইচ্ছা সেখানেই এদের বিচরণ করার শক্তি রহমতরূপে লাভ করেন। এবং এটাই নানা ভাষায় নানা শব্দের ভঙ্গিতে অফুরন্ত ফয়েজ লাভ করা বলা হয়েছে এবং মর্যাদা অনুযায়ী এদের রূপ ও শান বিচিত্র। সুতরাং এই নফসই আত্মাকে চিনতে পারে, আবার এই নফসই আত্মাকে চেনা তো দূরের কথা ধারণাও করতে পারে না। এই পারে এবং পারে না-টাই আল্লাহ্‌র ইচ্ছার উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল এবং ইহাই আপন আপন তকদিরের রহস্যময় লীলাখেলা। কখনো মনে হয় কথাটি বিরোধের আঁধারে ডুবে আছে, আবার কখনো মনে হয় মিলনের আলোর সাগরে মিলে একাকার হয়ে গেছে। তাই বিরোধ যে পর্যন্ত আছে দর্শনের বিভিনড়বতাও সেই পর্যন্ত আছে এবং থাকবে এবং থাকতে বাধ্য। কারণ, বিরোধ পৃথক করানোর দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে এবং এই পৃথক দেখাটাই বহুকে দর্শন করা এবং বহুকে দর্শন করাটাই শেরেক। পক্ষান্তরে মিলনের দর্শনে একেরই দর্শন লাভ হয় এবং সব কিছুতেই একের দর্শন হয় এবং এক ব্যতীত দ্বিতীয় দর্শন আর থাকে না এবং থাকার প্রশ্নই উঠে না। মহা এক শূন্যের গর্তে বহু দর্শনগুলো হারিয়ে যায় এবং হারিয়ে ফেলে সবকিছু। মহাশূন্যবাদের মধ্যেই একটিমাত্র শব্দ ধ্বনিত হয় আর সেটাই হলো : ‘আমিই সত্য', ‘আমিই সুবহানি', ‘আমিই প্রথম মুমিন', ‘আমিই প্রথম', ‘আমিই শেষ', ‘আমিই প্রকাশ্য' এবং ‘আমিই গোপনীয়' ইত্যাদি। মিলনের মহাসাগরে যারা মিশে একাকার হয়ে গেছেন তাদের কথা ও ভাবধারা বুঝতে পারে না তারাই, যারা বিরোধের বিভিনড়বতার মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করছে তথা বহু দর্শনের মধ্যে ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে। কারণ, মহা একের মধ্যে মিশে গিয়ে বিরোধকে কথার ভাষায় বুঝানো যায় না। তাই বিরোধের চোখে ও মনে একের কথাগুলো মনে হয় ধাঁধা, এবং অজ্ঞেয়তাবাদ ও সংশয়বাদের দোষে অভিযুক্ত করে বলতে চায় এই আছে এই নেই, থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে, আছে যে তাও বলছি না আবার নেই যে তাও বলছি না। আসলে এটাই বিরোধের আসল রূপ এবং মূল চরিত্র। সুতরাং মিলনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচার করে বিজ্ঞ বিচারকের পরিচয় দিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করে। কিন্তু এই আত্মতৃপ্তিই একদিন বিরোধের গলায় ফাঁস হয়ে ফ্রাসট্রেশনের তথা অন্তর্জ্বালার দাহ তুষের আগুনের মত জ্বলতে থাকে মৃত্যু নামক নফসের উপর ঘটনাটি আসার পূর্ব পর্যন্ত। আমরা এখন রূহ তথা আত্মার কথায় ফিরে যাই। আত্মা নিত্য কারণ ইহার শেষ নেই। নিত্য বলতে কী বুঝায়? যা আগে ছিল এবং বর্তমানে আছে এবং পরেও থাকবে, তথা এক কথায়, সব সময় আছে এবং থাকবে। আসলে বর্তমান কালটি পরমাণুর চেয়েও ছোট। ভবিষ্যতের পথ বেয়ে বর্তমানের একটি চমক দেখাবার পরই অতীতের দিকে চলে যায়। একটি বর্তমানের চমকের মধ্যে সমস্ত পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ কোটি কোটি আলাদা চমক দেখিয়ে অতীতের দিকে চলে যাচ্ছে। একটি বর্তমানের চমকের মধ্যে সমস্ত পৃথিবীর জীবজন্তুরা কোটি কোটি আলাদা চমক দেখিয়ে অতীতের দিকে চলে যাচ্ছে। এরকমভাবে সমস্ত আকাশ এবং তার নিচের মধ্যে যা কিছু আছে তারা অগণিত ভিন্ন ভিন্ন চমক বর্তমানকে দেখিয়ে অতীতের দিকে চলে যাচ্ছে। অবাক হতে হয় এই ভেবে যে, কারো চমকের সঙ্গে অন্য আর একটি চমকের মিল নেই এবং এ রকম অগণিত বিভিন্ন চমক বর্তমানকে একবারই দেখানো হয়। দ্বিতীয়বার সেই একই রকম চমক আর কোনোদিন এবং কোনো কালেও দেখানো হয় না এবং কোনোদিন হতেও পারে না এবং এটাকেই কোরান ‘জুল জালাল' বলে ঘোষণা করেছে।

-মারেফতের বাণী
চেরাগে জান শরীফ ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল-সুরেশ্বরী


শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত ও মারেফতের আলোচনা -মারেফতের বাণী / ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল-সুরেশ্বরী


এইবার আমরা এমন একজন অলীর লেখা কেবলা, কাবা এবং হজের আসল রহস্যের বর্ণনার অনুবাদ করবো যাঁর কথা শুনলে জাতিধর্ম নির্বিশেষে সবাই মাথা নত করে মেনে নেবেন এবং মানতে অবশ্যই বাধ্য হতে হবে। কারণ এমন অলীর কথা তারাই মানতে চাইবে না, যারা মানুষের আকৃতিতে পশুরূপে মানবসমাজে বাস করছে। অবশ্য মানুষের সুরতে যারা পশু তাদেরও প্রয়োজন আছে এবং তারা আছে বলেই তো মারেফতের গোপন কথা লেখার এত আয়োজন । সুতরাং এই লেখার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিজেকে ভুলেও মানুষের সুরতে পশু প্রমাণ করতে যাবেন না। যদি এমন কাজ করেন ফেলেন তা হলেও আপনাকে সম্মান দেখানো হবে। সেই সম্মানটির নাম হবে ‘ফার্স্ট ক্লাস জোকার।' খেলার মাঠে দু'একজন ড্রেস অ্যাজ ইউ লাইক মার্কা জোকার না থাকলে মাঠের মধ্যে হাসাহাসিটা তেমন জমে উঠে না। সেই বিখ্যাত অলীর লেখায় অনুবাদ করবো যাঁর নাম খাজা হাবিবুলাহ মাতা ফি হুব্‌বুল্‌লা সুলতানুল হিন্দ আতায়ে রসুল খাজা গরিবে নেওয়াজ ইয়া সৈয়দ মাওলানা মঈনুদ্দীন হাসান চিশতী সান্‌জারি আল হোসাইনি আল হাসানি। যার মাজার শরিফের এতই ওজন যে, একটিও নামে মুসলমান যদি না যায় তাতে কিছুই আসবে যাবে না। কারণ, কোটি কোটি হিন্দুরা কী রকম ভক্তি সহকারে মাজারে আসে তা যারা নিজের চোখে একবার দেখেছে তারাই আমার কথার সত্যতা স্বীকার করে নেবে। চোখে না দেখলে খাজার মাজারের ওজন দূর হতে করা মোটেই সম্ভব নয়। এই সেই খাজা বাবা, যাঁর উসিলাতে আজ ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের বুকে প্রায় ত্রিশ কোটি মুসলমানের অস্তিত্ব অবলোকন করি। এই সেই খাজা, যাঁর কাছে বড় বড় হিন্দু সাধকেরা মাথা নত করে নিজের ধর্ম ফেলে দিয়ে মুসলমান হয়েছেন। সাধক রাম সাধু, রাজীব সাধু, ত্রৈলোক্য সাধু এবং জয়পাল সাধুর মত হাজার হাজার সাধকেরা নিজেদের ধর্ম ফেলে দিয়ে মুসলমান হয়েছেন। কথায় বলে মানুষ তার দেশত্যাগ করতে পারে হাসিমুখে, কিন্তু নিজের ধর্ম পারে না ত্যাগ করতে। তার কিছুটা নমুনা দেখার ভাগ্য কি আপনার আমার হয় নি? কত বড় আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী হলে লক্ষ লক্ষ হিন্দুরা খাজা বাবার কাছে গিয়ে মুসলমান হয়েছেন। আর আমার মত আরবি ভাষা জানা মোল্লা অথবা পণ্ডিত যদি হিন্দুপট্টিতে সাতদিন সাতরাত ওয়াজ নসিহত করি তাহলেও একটি হিন্দুর পক্ষে মুসলমান হবার প্রশ্নটি না হয় বাদই দিলাম, এমনকি সেই ওয়াজ নসিহত কেউ শুনবে কি? আপনার বিবেককে প্রশ্ন করে দেখুন তো? ‘প্রত্যেক মানুষের সঙ্গে একটি করে শয়তান দেওয়া হয়েছে', সুতরাং সেই শয়তানটি যদি আপনার বিবেকের সিংহাসনে বহাল তরিয়তে বসে থাকে তবে গোঁজামিলের একখানা উত্তর হয়তো পাওয়া যেতে পারে। কারণ হিসাবে বলতে চাই যে, যদিও অধম লেখক রাজনীতি করা তো দুরে থাক এর ধারে কাছেও নেই তবু বলতে হচ্ছে যে, কিছুদিন আগে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট খাজা বাবার মাজারে মাত্র দশ হাজার মার্কিন ডলার দান করেছিলেন বলে কিছুসংখ্যক মানুষের সুরতে পশুরা এর প্রতিবাদ করতে সামান্য লজ্জা বোধ করেনি। এই সামান্য টাকার প্রশ্নে নামে-মুসলমান হয়ে যদি প্রতিবাদ করতে পারে তাহলে হিন্দুস্তানের বড় বড় হিন্দু ধনীরা যে লাখ লাখ টাকা প্রতিবছর খরচ করছে সেটা একবার দেখে আসুন না। অবশ্য আপনারা দেখতে যাবেন না। কারণ, প্রত্যেক মানুষের সঙ্গে যে একজন শয়তান দিয়ে দেওয়া হয়েছে, মহানবীর সেই বাণীর সার্থকতা তাহলে থাকে কোথায়? মকতুবাতে খাজা নামক বইটিতে খাজা বাবা কেবলা কাবা এবং হজের আসল রূপটি কী তা চিঠির ভাষায় বর্ণনা করছেন। কারণ তিনি তাঁর প্রধান মুরিদ বাবা কুতুব উদ্দিন বখতিয়ার কাকীকে যে কয়টি চিঠি লিখে পাঠিয়েছিলেন সেই চিঠিগুলোর একত্র সমাবেশের নামই হল মকতুবাতে খাজা। আগেই বলে রাখি যে, তাঁর চিঠির মান এতই উনড়বত যে অধম লেখকের মাথা গুলিয়ে যায়। কারণ, তিনি যে হাদিসের কথা বর্ণনা করেছেন, সেই হাদিসের দলিল কোথাও পাওয়া যাবে না এবং যেতে পারে না। কারণ, তিনি নিজেই সেই কথা বলতে গিয়ে তাঁর প্রধান মুরিদ বাবা কুতুব উদ্দিন বখতিয়ার কাকীকে বলেছেন যে, তিনি চরম রহস্যময় রাজ্যের পর্দা উঠিয়ে দেখতে পেলেন যে, মহানবী হজরত উমর ফারুককে উপদেশ দিচ্ছেন এই বলে যে, ‘হে উমর, অবশ্যই ইহা জেনে রাখ যে, মানুষের হৃদয়ই হল খানায়ে কাবা। মানুষের হৃদয় যেমন খানায়ে কাবা তেমনি মোমিনের হৃদয় হল আল্লাহ্‌র আর্শ তথা বসবাসের স্থান, যাকে সিংহাসন বলা হয়। সুতরাং এই হৃদয় তথা দিল-কাবার হজ করা প্রয়োজন।' হজরত উমর (রা.) জানতে চাইলেন, ‘হে আল্লাহ্‌র রসুল, দিল-কাবার হজ কেমন করে করতে হবে?' মহানবী বললেন, ‘মানুষের অস্তিত্ব চারটি দরজার মত : আব, আতশ, খাক ও বাদ অর্থা পানি, আগুন, মাটি এবং বাতাস। এই চারটি দরজা হতে সমস্ত সন্দেহ, অহঙ্কার এবং বহু ইলার পর্দাকে সরিয়ে দিতে পারলে দিলের আয়নায় তথা হৃদয়ের মুকুরে আল্লাহ্‌র খাস জালুয়া তথা নূর প্রত্যক্ষ দেখতে পাবে। খানায়ে কাবার আসল হজ পালন করা ইহাই। এই আসল হজটি তখনই হয়, যখন মানুষ তার নিজের আমিত্ব তথা স্বকীয়তা এমনভাবে মিটিয়ে ফেলবে যে আমিত্ব তথা স্বকীয়তার নাম গন্ধটুকু পর্যন্ত আর অবশিষ্ট থাকবে না। এমনকি তার বাহির এবং ভেতর এক রকম পবিত্র হবে এবং দিল তথা হৃদয় আল্লাহ্‌র নূরে নূরময় হয়ে যাবে।' হজরত উমর (রা.) মহানবীকে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ‘নিজের আমিত্ব তথা নিজের স্বকীয়তাকে কেমন করে নিস্ত তথা নাই করে দিতে হবে?' মহানবী বললেন, ‘মাহ্‌বুবের তথা আল্লাহ্‌র আশেক তথা প্রেমিক হতে পারলে নিজের আমিত্বকে তথা নিজের স্বকীয়তাকে ফানা করা তথা বিলীন করা সম্ভবপর হয়। যিনি মাহ্‌বুবের প্রেমিক হয়েছেন, তিনি ফানাফিলা তথা নির্বান লাভ করতে পেরেছেন এবং তিনি তখন মাহবুবের খাস জাতের মোজহার তথা প্রকাশকরূপে পরিগণিত হয়েছেন।' আবার হজরত উমর (রা.) মহানবীকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘দিলকে তথা হৃদয়কে খানায়ে খোদা তথা আল্লাহ্‌র ঘর এবং আরশে এলাহি কেন বলা হয়েছে? মহানবী বললেন, কোরানে আল্লাহ্‌ বলেছেন, “তিনি তোমাদের ভেতরই আছেন, কিন্তু তোমরা তাকে দেখছো না।” হে উমর, থাকবার জায়গাটিকেই ঘর বলা হয় এবং যেহেতু আল্লাহ্‌ দিলে তথা হৃদয়ে অবস্থান করেন সেই হেতু দিলকে খোদা তথা আল্লাহ্‌র ঘর বা আরশাল্লাহ্‌ আখ্যা দেওয়া হয়।' হজরত উমর (রা.) পুনরায় মহানবীকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এই মাটির তৈরি দেহের ভেতরকে কথা বলে? কে কান দিয়ে শুনছে? কে চোখ দিয়ে দেখছে? এবং কে সে যে সব কিছ ু অবগত হয়? আর সে-ই বা কে বা তার রূপই বা কেমন?' মহানবী বললেন, ‘এই মাটির তৈরি দেহে আর কেহ নয়, একমাত্র আল্লাহ্‌ই কথা বলেন, আল্লাহ্‌ই শ্রবণ করেন, আল্লাহ্‌ই দেখেন এবং সকল বিষয়ের উপর তিনিই জ্ঞানদানকারী তথা জ্ঞানদাতা।' হজরত উমর আবার প্রশ্ন করলেন, ‘এ রকম খাস জাতের মোজহার কি স্বয়ং মহানবী নন?' মহানবী বললেন, ‘আমি মিম ব্যতীত আহ্‌মদ।' মহানবীকে পুনরায় হজরত উমর (রা.) প্রশ্ন করলেন, ‘দিল কাবার হজ কে করতে পারে?' মহানবী বললেন, ‘দিল কাবার হজ একমাত্র তিনিই করতে পারেন যিনি আল্লাহ্‌র জাতের মধ্যে ডুবে গেছেন।' অর্থা যখন সাধক নিজের আমিত্বের তথা স্বকীয়তার দেয়াল সরিয়ে দিতে পারে এবং সাধক ও আল্লাহ্‌র মাঝখানে আর কোনো প্রকার দেয়াল না থাকে কেবল তখনই সে আল্লাহ্‌র গুণে গুণান্বিত হয়ে যায় এবং তার দিল তথা হৃদয় আল্লাহ্‌র খাস নূরে নূরময় হয়ে যায়। সাধকের দিলে তথা হৃদয়ে আল্লাহ্‌র জাত নূরের বিকাশ ও প্রকাশ হওয়াই দিল কাবার হজ এবং ইহাই আসল হজ তথা প্রকৃত হজ। মহানবীকে হজরতউমর (রা.) প্রশ্ন করলেন, ‘যখন সব কিছুই এক পবিত্র জাতের প্রকাশ ও বিকাশ, তাহলে এই পথ বা রাস্তা দেখানো কার জন্য এবং কেন?' মহানবী বললেন, ‘তিনি নিজেই পথ এবং প্রদর্শনকারীও তিনিই।' মহানবীকে আবার হজরত উমর (রা.) প্রশ্ন করলেন, ‘তবে এই দুনিয়াতে এত নানান রকম রং ও রূপের এবং গুণ ও গরিমার প্রকাশ কেন?' মহানবী বললেন, ‘পথ যিনি দেখান তাকে একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে তুলনা করা চলে। ব্যবসায়ীর কাছে যিনি যে জিনিসটি কিনতে চাইবেন ব্যবসায়ী ঠিক সেই জিনিসটিই তাকে দেবেন। গম যিনি কিনতে আসবেন তাকে ব্যবসায়ী ঠিক সেই জিনিসটিই দেবেন। এর প্রধান কারণ হল এই যে, যিনি গম কিনতে আসবেন তাকে যব এবং যিনি যব কিনতে আসবেন তাকে গম কখনোই কোনো ব্যবসায়ী দেবেন না। ‘হে উমর, নবীদের তুলনা অনেকটা ডাক্তারদের মত। ডাক্তারেরা যেমন রুগী এবং রোগের পরিচয় জানবার পর ঔষধ দেবার ব্যবস্থা করেন এবং তাতেই রুগী রোগমুক্ত হয়, সে রকম নবীরা মানুষের আত্মার রোগের পরিচয় জানবার পর মারেফতি ঔষধ প্রদান করেন, যার অশেষ কৃপায় মানব আত্মার রোগগুলো হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্তি পেয়ে আল্লাহ্‌র রহস্য হতে পারে। ‘হে উমর, ধর্মপথের যাত্রীদেরকে মোটামুটি চারটি বিভিন ড়ব দলে ভাগ করা যায়। জ্ঞান ও গুণের প্রশ্নে এই চারটি দলের মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য পাওয়া যায়। প্রথম দলটির নাম হল দলে ভর্তি হওয়া মুসলমান যাকে আম মুসলমান বলা হয়। এই দলে ভর্তি হওয়া নামের মুসলমানদেরকে জাহের পোরস্ত তথা প্রকাশ্য ইবাদতকারী বলা হয় এবং এরাই শরিয়তের প্রথম সিঁড়িতে অবস্থান করে। এই সিঁড়িতে অবস্থান করে যদি তারা মৃত্যুর নিকটবর্তী হয় এবং এই সিঁড়ি অতিক্রম করতে যদি চেষ্টা না করে তাহলে তারা ধর্মের আসল উদ্দেশ্য হতে বঞ্চিত হবে। দ্বিতীয় দলটির নাম হলো আওয়ামুল খাস। এই দলটির বিশেষত্ব হল যে, এরা একদিকে যেমন সাধারণ আবার অন্যদিকে কিছুটা অসাধারণের গন্ধ পাওয়া যায়। এই দলটি রহস্যলোকের জ্ঞানের প্রতি কিছুটা আকৃষ্ট বটে, কিন্তু নিজেকে কেমন করে চিনতে হবে সেই জ্ঞান হতে বঞ্চিত তথা রমুজে রূহানিয়াত বিষয়টিতে অজ্ঞ। এরাই আহলে তরিকত বলে পরিচিত তথা পরিচয়ের পথে অবস্থান করে। তৃতীয় দলে যারা আছে তারা হলো খাস তথা আসল। এরা কেবল একমাত্র দ্বীনের মধ্যে বাস করে এবং এরা নিজেদের আপন পরিচয় জানতে পেরেছে। এদেরকেই বলা হয় আহ্‌লে হাকিকত তথা সত্যের রাজ্যে বাস করছে। চতুর্থ দলে যারা আছে তাদেরকে বলা হয় খাস্‌ল খাস তথা আসলেরও আসল। এরা সব সময় আল্লাহ্‌র রহস্যে ডুবে থাকে এবং আল্লাহ্‌র পবিত্র জাতের গুণাবলির বিকশিত প্রত্যক্ষ রূপ হলো এরা এবং সব সময় সব রকম অবস্থায় যা দর্শনীয় তসমুদয় দর্শন করে। যে কোন ধরনের কলুষতা, অহংকার এবং আমিত্বের দেয়াল এরা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। দুধের ভেতর চিনি মিশালে যেমন চিনির আলাদা পরিচয় জানার আর অবকাশ থাকে না, তেমনি এরা আল্লাহ্‌র জাতের ভেতর ডুবে গিয়ে নিজের আমিত্বকে ফানা করে তথা নির্বাণ করে দিয়ে বাকাবিলাহ্‌তে তথা চিরস্থায়িত্বের মধ্যে অবস্থান করে। এ রকম বাকাবিল্লাহ্‌র লোকেরাই আহ্‌লে মারেফত তথা মারেফতের মধ্যে বাস করে। ‘হে উমর, হেদায়েত তথা দীক্ষা দেওয়া এবং রাহ্‌নামায়ী তথা পথ প্রদর্শন তালেবের তথা পথসন্ধানীর যোগ্যতা বিচার করা হয়। আসরারে এলাহি তথা আল্লাহ্‌র গুপ্ত রহস্যের মহান নিয়ামত সাধারণ মানুষকে দান করা যায় না। সাধারণ মানুষকে এ রকম নিয়ামতে উজমা দান করলে ইহার অবমূল্যায়ন এবং অপব্যবহার হবার সম্ভাবনা তাকে। কারণ, সাধারণ মানুষ এই বিরাট নিয়ামতের গুরুদায়িত্ব বহন করতে পারবে না এবং অবশেষে রাহে গোমরাহীতে তথা ভুল পথে এগিয়ে যাবে।' হজরত উমর (রা.) আবার মহানবীকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আল্লাহ্‌র জাত কী এবং আর সমস্ত বস্তুই বা কী? মহানবী বললেন, ‘সমস্ত বস্তুই আল্লাহ্‌র মোজহাব তথা প্রকাশস্থল, যদিও প্রকাশের ধারাতে অনেক রকম কিন্তু হাকিকতে তথা আসলে সমস্ত কিছুই এক। কিন্তু মানুষকে সমস্ত সৃষ্টির উপর কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা আল্লাহ্‌ দান করেছেন। কারণ, মানুষকেই আল্লাহ্‌র নিজের সুরতে তথা চেহারায় তৈরি করেছেন। ‘হে উমর, ইসলামের প্রধান উদ্দেশ্য হল মোমিনরূপে পরিগণিত হওয়া। ইহার আসল পরিচয় সম্বন্ধে বিস্তারিত ব্যাখ্যা তোমাকে জানালাম। বর্তমান অবস্থায় তোমার পক্ষে ইহাই যথেষ্ট। যখন তুমি এর চেয়ে আরো বেশি অগ্রসর হবে এবং কামালিয়াতের তথা সিদ্ধির শেষ পর্যায়ে উপনীত হবে তখন কেবল তোমার ভেতরই তোমার সব রকম গুণাবলি এবং গোপন রহস্যের যাবতীয় প্রকাশ ও বিকাশ তোমার ভেতরই মওজুদ দেখতে পাবে।' তারপর মহানবী এই শেষ উপদেশটি দিলেন যে, যে নিজেকে চিনতে পেরেছে সে তার রবকে চিনতে পেরেছে। বাবা কুতুব উদ্দিন, এই সকল আদেশ-উপদেশ যা মহানবী হজরত উমর (রা.)-কে দিয়েছেন তা আজ পর্যন্ত রহস্যলোকের পর্দার ভেতর ছিল তথা রাজে মখফীর পুশিদাতে ছিল। আমি রহস্যলোকের আদেশ পাবার পরই তোমাকে লিখে দিলাম। জাহেরি মোল্লা ও পণ্ডিতদের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ করতে যেও না। কারণ আল্লাহ্‌র বিনা হুকুমে কোনো কিছু নড়াচড়া করতে পারে না। বাদ আস্‌সালাম। মহানবীর আদর্শের বাণী না বলে যদি খাজা বাবা তাঁর নিজের বাণী বলে প্রচার করতেন এবং যদি তিনিই সর্বেসর্বা এবং আর কিছু নেই বলে ঘোষণা করতেন তাহলে পাক-ভারতের ত্রিশকোটি মুসলমান খাজা বাবা ছাড়া আর কিছু কি গ্রহণ করতেন? তাহলে কি খাজা বাবার ধর্ম বলে একটি আলাদা ধর্মপাক-ভারতে বিরাজিত থাকতো? তাহলে কি তাঁর বানানো ত্রিশকোটি মুসলমান আজ অন্য কোনো ধর্ম মানতে চাইতো? কত বড় সাংঘাতিক ওজন খাজা বাবার। ভারতেও অবাক লাগে। বিস্ময়ে হতে হয় অভিভূত। জাতি-ধর্মনির্বিশেষে লাখো লাখো মানুষের আগমন হয় যাঁর পবিত্র রওজা মোবারকে। অবাক হতে হয় যেই কথাটা মনে করে সেই কথাটি হল, যদি একটিও মুসলমান খাজা বাবার মাজারে না যায় তাতে তাঁর রওনক ও শান একবিন্দুও কমে যাবে না। কারণ, লাখো লাখো অন্য ধর্মের মানুষেরা যেভাবে তাঁর মাজারে সমবেত হন তা একবার চোখে দেখলেই এই কথার সত্যতা বুঝতে পারবেন।

-মারেফতের বাণী
চেরাগে জান শরীফ ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল-সুরেশ্বরী